ডেস্ক রিপোর্ট – শহীদ সিরাজ লেক। পর্যটকদের কাছে নীলাদ্রি নামেই পরিচিত। অনেকেই আবার ‘বাংলাদেশের কাশ্মীর’ বলে ডাকেন। যে যাই বলুক জায়গাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যে কেউ মুগ্ধ হতে বাধ্য, এতে কোনো সন্দেহ নেই। চমৎকার নীল পানি, ছোট বড় টিলা আর পাহাড়ের সমন্বয় এই লেককে করেছে অপার্থিব সৌন্দর্য্যের অধিকারী। স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের জন্য দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে জায়গাটি।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের এই লেকটি গত ৩ বছরে খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। লেকটি পড়েছে বাংলাদেশে আর লেক পাড়ের পাহাড় পড়েছে ভারতে। লেকের আশপাশে অসংখ্য ছোট ছোট টিলা। আরেকটু এপাশে এলেই বিস্তৃত টাঙ্গুয়ার হাওড়। ঘাসে ঢাকা সবুজ টিলা, লেকের টলটলে পানি, ওপারে নীলচে পাহাড় সব মিলিয়ে এক নজরেই মন বলে ওঠে ‘অসাধারণ’! স্বর্গীয় শান্তির বাস এই লেকে। ভ্রমণকারীরা ছবি দেখে হন্যে হয়ে ছুটে আসেন এখানে, ক্যাম্পিং করেন কখনো জ্যোৎস্না রাতে, কখনো বা তারা ভরা আকাশের নিচে।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া বীর যোদ্ধা বীর বিক্রম খেতাব প্রাপ্ত সিরাজুল ইসলামের নামে নামকরণ করা হয়েছে। নামটি তাহিরপুর এলাকাবাসীর দেয়া। মুক্তিযুদ্ধে এই অঞ্চলের অবদানের স্বীকৃতি এই নামকরণ। কিন্তু কোনো সাইনবোর্ড না থাকায় বা সেভাবে প্রচার না হওয়ায় পর্যটকরা ‘নীলাদ্রি’ নামে নামকরণ করে! এ নামটি বেশ জনপ্রিয়তা পায় ভ্রমণকারীদের মাঝে। এতে ঢাকা পড়ে যায় লেকের আসল নাম। যদিও তাহিরপুরবাসীদের কাছে এটি শহীদ সিরাজ লেকই, তারা ভুলে যাননি ইতিহাসকে।
ঢাকা থেকে নিজের সুবিধা মত যেকোনো রুটে নীলাদ্রি লেক যেতে পারেন-
* রুট ১: ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে মামুন ও শ্যামলী পরিবহণের বাস সরাসরি সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং মহাখালী থেকে ছেড়ে যায় এনা পরিবহণের বাস। সুনামগঞ্জ পৌঁছাতে প্রায় ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। সুনামগঞ্জ শহরের নতুন ব্রীজ এলাকায় টেকেরঘাট যাবার জন্য মোটর সাইকেল ভাড়া পাবেন। রিজার্ভ নিলে মোটরসাইকেল ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। যাত্রা পথে যাদুকাটা নদী পার হওয়ার সময় জনপ্রতি ৫ টাকা এবং মোটর সাইকেলের জন্য ১০ টাকা ভাড়া দিতে হবে। সুনামগঞ্জ থেকে মোটর সাইকেলে লাউড়ের গড় পর্যন্ত আসতে ভাড়া লাগবে ২০০ টাকা। সেখান থেকে যাদুকাটা নদী পাড় হয়ে বারিক্কা টিলা থেকে ১২০ টাকা ভাড়ায় টেকেরঘাট যাবার মোটর সাইকেল পাবেন। উল্লেখ্য, মোটরসাইকেল রিজার্ভ কিংবা ভাড়ার ক্ষেত্রে দুইজন ধরা হয়েছে।
* রুট ২: ঢাকা থেকে হাওর এক্সপ্রেস নামক একটি আন্তঃনগর ট্রেন রাত ১১ টায় নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের অভিমুখে যাত্রা করে সকালবেলা মোহনগঞ্জ পৌঁছায়। এই ট্রেনে ২০০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যায়। মোহনগঞ্জ থেকে মধ্যনগর যেতে ১ ঘণ্টা সময় লাগে। মধ্যনগর (পিপরা কান্দা ঘাট) থেকে বর্ষাকালে ট্রলার, স্পিডবোট বা নৌকা দিয়ে টেকেরঘাট যাওয়া যায়। আবার নেত্রকোনা থেকেও সরাসরি নৌকা বা ট্রলার ভাড়া করে টেকেরঘাট যাওয়া যায়। তবে শীতকালে নেত্রকোনা থেকে টেকেরঘাট যেতে মোটরসাইকেল ব্যবহৃত হয়।
* রুট ৩: বর্ষাকালে আপনি ভিন্ন পথেও যেতে পারবেন। সুনামগঞ্জ থেকে টাংগুয়ার হাওর হয়ে টেকেরঘাট যেতে পারবেন নৌকা নিয়ে। সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা নদীর উপর নির্মিত বড় ব্রীজের কাছে লেগুনা/সিএনজি/বাইক করে তাহিরপুরে সহজেই যাওয়া যায়। তাহিরপুরে নৌকা ঘাট থেকে সাইজ এবং সামর্থ অনুযায়ী নৌকা ভাড়া করে নিন। নৌকা ভাড়া করুন এইভাবে যে টাংগুয়ার হাওর দেখে টেকেরঘাট যাবেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-